দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ সরকারের ব্যর্থতায় লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন। জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের উদ্যোগে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন রিজভী। এ সময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিসহ বিএনপির ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সরকারের অনেক নিপীড়ন-নির্যাতনের পরও নিজেদের পকেটের টাকায় সারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমাদের নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১২ লাখ মানুষকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ দিতে পেরেছে। আজকে আড়াইহাজারের মাহমুদুর রহমান সুমন নগদ অর্থ ও খাদ্য দিচ্ছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণের টাকায় কেনা ত্রাণ সরকারি দলের লোকজনের ঘর থেকে, খড়ের পালা থেকে, খাটের নিচ থেকে চাল-ডাল-তেল পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক দল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে পারবেন না। হাজার হাজার বস্তা চাল ধরা পড়ছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদস্য অথবা আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। গোটা দেশকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন, মানুষ সেটা মেনে নেবে না।’
রিজভী আরো বলেন, ‘চীনে যখন করোনাভাইরাস শুরু হলো, তখন বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিল না। মার্চ মাসে করোনাভাইরাস শুরু হয়েছে, সরকার তা জানায় নাই। অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি কতটুকু দায়িত্ব আছে তা আপনারাই বুঝতে পারছেন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আজ চিকিৎসকরা মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। করোনার বিরুদ্ধে যে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার ছিল, তা নেওয়া হয়নি। গতকাল বলছে, শহর এলাকার পোশাক কারখানা খুলে দেবে। সব শ্রমিক এলে কী ভয়াবহ অবস্থা হবে, তা অনুমান করা যায়। একজনের হলে সবাই আক্রান্ত হবে। ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইতালিতে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই, প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। চিকিৎসকরা, নার্সরা ভয় পাচ্ছেন। যাঁরা চিকিৎসা করবেন, তাঁরা যদি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, করোনা আক্রান্ত হয় তাঁদের জীবন চলে যায় তাহলে কে চিকিৎসা দেবে। বিশ্বে যে পরিস্থিতি দেখছি, আল্লাহ না করুক ওইসব দেশের মতো যেন না হয়। উন্নত দেশগুলো লাশের সারি ঠেকাতে পারছে না, সে তুলনায় আমাদের কিছুই নেই। সরকার কোনো দায়িত্ব পালন করতে চায় না। বুঝেও না। মন্ত্রীরা ঘরের মধ্য থেকে ভিডিও বার্তা দিচ্ছে আর বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যেও অসহায় মানুষদের পাশে ছুটে যাচ্ছে, সহযোগিতা করছে।’
রিজভী বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের আক্রান্তের খবর পাচ্ছি। মারা যাচ্ছে বহু লোক। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এত আক্রান্ত হতো না। ভিয়েতনাম ও ভুটান পদক্ষেপ নেওয়ায় সে দেশে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার পদক্ষেপ নেয়নি; বরং সরকারি দলের লোকেরা আত্মসাৎ করছে, চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আর তাতে সহযোগিতা করছে সরকার। আবার যারা চুরি করছে, তাদের দিয়ে ত্রাণ সহায়তার কথা বলছে। অর্থাৎ চোরকে দিয়ে ঘর পাহারা দেওয়ার কথা বলছে। তাহলে এ সরকার দিয়ে দেশের সংকট মোকাবিলা করা যাবে না। মহামারি মোকাবিলা করতে হলে সবার ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করে সরকার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে গিয়ে ভয়ংকর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ দেশের মানুষের লাশের সারি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এই বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কয়েক দিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তাকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে বলছেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের অসহায়, গরিব, দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
দৈনিক প্রত্যয়/ জাতীয়/ জাহিরুল মিলন